বিশেষ সাক্ষাৎকার:
মানবসভ্যতার ইতিহাসে যখন নৈতিকতা, ন্যায়বিচার ও মানবিক মূল্যবোধ সবচেয়ে বেশি অবহেলিত হচ্ছিল, তখন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমন মানবজাতির জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে ওঠে। তাঁর জীবনাচরণে সত্য, সততা, দয়া, ন্যায়পরায়ণতা ও মানবিকতার যে সমন্বয় আমরা দেখি, তা সব যুগের জন্যই এক পূর্ণাঙ্গ আদর্শ। বর্তমান সমাজে নৈতিক অবক্ষয়, দুর্নীতি, স্বার্থপরতা ও অসহিষ্ণুতা যেভাবে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে নবীর চরিত্র অনুসরণ করা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে।
মহানবীর আদর্শিক জীবন শুধু একটি ধর্মীয় নির্দেশনা নয়, বরং তা সামাজিক স্থিতিশীলতা, নৈতিক শুদ্ধতা ও মানবিক উন্নয়নের বাস্তব দিকনির্দেশনা। তাই নৈতিক অবক্ষয় রোধ করতে হলে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের প্রতিটি স্তরে তাঁর চরিত্রকে অনুসরণ ও অনুকরণ করার কোনো বিকল্প নেই।
সালামুন আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।
রাজা আলী: ওয়ালায়কুমুস সালাম।আপনাকেও অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
বর্তমান সময়ে নৈতিক অবক্ষয়ের বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?
রাজা আলী: আজকের দিনে আমাদের মধ্যে ন্যায়-নীতির অবক্ষয় চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। মানুষ মধ্যে থেকে ধৈর্য, সহনশীলতা,ত্যাগ ইত্যাদি মহৎ গুণগুলি অন্তর্হিত হতে বসেছে।ফলে এই অবক্ষয়ের হাত থেকে মুক্তির জন্য সঠিক পদক্ষেপ খুব ই জরুরি।
বর্তমান সমাজে নৈতিক অবক্ষয়ের সমস্যা নিয়ে যখন আমরা খুব ই চিন্তিত,তখন এ সমস্যার সমাধান কীভাবে সম্ভব বলে আপনি মনে করেন ?
রাজা আলী: নৈতিক অবক্ষয়ের বিষয়টি সত্যিই খুব ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।যে কারণে নিজেদের মধ্যে ধর্মীয় কাজের ক্ষেত্রে নানা দ্বন্দ্ব ও বিবাদ সৃষ্টি হচ্ছে।এই নৈতিক অবক্ষয় রোধে সর্বশ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত হলেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)এর চরিত্র। তাঁর চরিত্র আমাদের জন্য আলোক বর্তিকা। যদি আমরা তাঁর ধৈর্য,সততা, দয়া, ন্যায়পরায়ণতা এবং সত্যবাদিতাকে অনুসরণ করি,তবে সমাজে নৈতিক অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব।
মহানবীর চরিত্রে কোন কোন দিক বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক বলে মনে করেন?
রাজা আলী: প্রথমত, তাঁর সত্যবাদিতা—তিনি জীবনে কখনও মিথ্যা বলেননি। দ্বিতীয়ত, তাঁর ন্যায়বিচার—শত্রু বা আত্মীয় যে-ই হোক, ন্যায় প্রতিষ্ঠায় তিনি ছিলেন দৃঢ়। তৃতীয়ত, তাঁর দয়া ও ক্ষমাশীলতা—যারা তাঁকে কষ্ট দিয়েছে, তাদের প্রতিও তিনি সহনশীল ছিলেন। ইত্যাদি গুণগুলো আজকের সমাজে অত্যন্ত প্রয়োজন।
আমাদের তরুণ প্রজন্ম কীভাবে মহানবীর চরিত্রকে অনুসরণ করতে পারে?
রাজা আলী: তরুণরা যদি নিজেদের জীবন যাপনের ক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ,স্বার্থ ও লোভ সংবরণ,মিথ্যা ও প্রতারণা থেকে বিরতি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ এবং দায়িত্ব গ্রহণ করে, তবে সেটিই হবে মহানবীর চরিত্র অনুসরণের বাস্তব রূপ।
শেষ প্রশ্ন—নৈতিক অবক্ষয় রোধে সামগ্রিকভাবে সমাজ কীভাবে উপকৃত হতে পারে?
রাজা আলী: যদি সমাজের প্রতিটি স্তরে মহানবীর আদর্শ কার্যকর হয়, তবে পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পর্যন্ত সর্বত্র নৈতিকতা প্রতিষ্ঠিত হবে। তখন অবক্ষয় কমবে, মানুষ একে অপরের প্রতি সহমর্মী হবে, এবং একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে উঠবে। এবং একজন ইসলাম ধর্মাবলম্বী হিসাবে এটা আমাদের সর্বাগ্রে প্রয়োজন।
আপনার কমেন্ট